পরকালে বিশ্বাস ঈমানের অপরিহার্য অংশ। পরকালের বিশ্বাস ও ভয় মানুষকে পরিশুদ্ধ জীবনযাপনে সাহায্য করে। মানুষের ইহকালীন জীবনে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। পবিত্র কোরআনে মুমিনদের নানাভাবে পরকালীন জীবনের পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে মুমিন কখনো পরকালীন জীবনের ভয় থেকে মুক্ত হতে পারে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমরা আশঙ্কা করি, আমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে এক ভীতিপ্রদ ভয়ংকর দিনের।’ (সুরা : দাহর, আয়াত : ১০)

পরকালের ব্যাপারে উদাসীনতা নয় : মুমিন কখনো পরকালের ভয় থেকে মুক্ত হতে পারে না। কেননা হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা দুটি বড় বিষয়কে ভুলে থেকো না। আমরা বললাম, বড় বিষয় দুটি কী? তিনি বললেন, জান্নাত ও জাহান্নাম। (মুসনাদে আহমাদ)

দ্বিন পালনের নিশ্চয়তা : পরকালের ভয় মানুষকে ধর্মীয় জীবনযাপনে সাহায্য করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘সেসব লোক, যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে, নামাজ আদায় থেকে ও জাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে, যেদিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৭৩)
আল্লাহমুখী করে : পরকালের ভয় মানুষকে আল্লাহমুখী করে, আল্লাহর নৈকট্য লাভের সাধনায় লিপ্ত করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা শয্যা ত্যাগ করে তাদের প্রতিপালককে ডাকে আশায় ও ভয়ে এবং আমি তাদের যে জীবিকা দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে।’ (সুরা : সাজদা, আয়াত : ১৬)

পাপমুক্ত জীবন লাভ : পরকালের ভয় মানুষকে পাপমুক্ত জীবনযাপনে সাহায্য করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, আমি যদি আমার প্রতিপালকের অবাধ্য হই, তবে আমি ভয় করি মহাদিবসের শাস্তির।’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ১৩)

দুনিয়ার মোহ দূর করে : পরকালের ভয় মানুষের দুনিয়ার মোহ দূর করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, (দুনিয়ার ও আখিরাতের প্রকৃত রূপ ও পরিণতি সম্পর্কে) আমি যা জানি, তা যদি তোমরা জানতে, তবে তোমরা কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪৮৫)

জান্নাতে প্রবেশের পরই ভয়মুক্তি : জান্নাতে প্রবেশের আগে মুমিন পরকালীন ভয় থেকে মুক্ত হতে পারে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘স্থায়ী জান্নাত, যাতে তারা প্রবেশ করবে, সেথায় তাদের সোনা নির্মিত কঙ্কণ ও মুক্ত দ্বারা অলংকৃত করা হবে এবং সেখানে তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের। আর তারা বলবে, সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দুঃখ-দুর্দশা দূরীভূত করেছেন।’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ৩৩-৩৪)

পরকালে ক্ষতিগ্রস্তরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত : পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরাই প্রকৃতপক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত। কেননা পরকালীন জীবনই মানুষের আসল জীবন। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন! ক্ষতিগ্রস্ত তারাই, যারা কিয়ামতের দিন নিজেদের ও নিজেদের পরিজনবর্গের ক্ষতিসাধন করে। জেনে রেখো, এটাই সুস্পষ্ট ক্ষতি।’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ১৬)

পরকালের ব্যাপারে অন্যকে সতর্ক করা : মুমিন শুধু নিজে পরকালীন পরিণতিতে ভয় করবে না, বরং অন্যকেও সতর্ক করবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের সতর্ক করে দাও আসন্ন দিন সম্পর্কে, যখন দুঃখ-কষ্টে তাদের প্রাণ কণ্ঠাগত হবে। অবিচারকারীদের জন্য কোনো অন্তরঙ্গ বন্ধু নেই, যার সুপারিশ গ্রাহ্য হবে এমন কোনো সুপারিশকারীও নেই।’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ১৮)

কলমকথা/এমএনহাসান